সম্মূখ ভাগ

সম্মুখ ভাগ

এই এলাকাটি ছিল ক্ষেত খামার খাল, বনজঙ্গল আর নিচু ভূমি বিশেষ করে ধানক্ষেত ছিল পুরো এলাকা জুড়ে। জনমানুষের তেমন আনাগোনা ছিলনা রাতের বেলাতো বটেই দিনের বেলাও এখানে শেয়াল ডাকত। প্রায় জনশূন্য ছিল এই এলাকা। অল্প কিছু বসত বাড়ি ছিল। আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে শহর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬১ সালের ১লা অক্টোবর ৩২ নং সড়কের এই ঐতিহাসিক বাড়িতে সপরিবারে বসবাসের পর থেকে জনসাধারণের আনাগোনা শুরু হয়। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন ৬৬ ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ৭০ এর সফল নির্বাচন পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনের সময় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই বাড়ির সম্মুখ ভাগের আঙ্গিনায় জড়ো হতো তাদের প্রিয় নেতার কাছ থেকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নেওয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল বাড়ির সম্মুখ ভাগের আঙ্গিনায় প্রতিবেশী আদিল ইমরানের সাথে খেলাধুলা করতেন এবং বাড়ির চারপাশে সাইকেল চালাতেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠ্যপুত্র শেখ কামাল এই বাড়ির পেছনের আঙ্গিনা দিয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দীর্ঘ ১১ মাস পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাড়িটি দখল করে রাখে অযত্ন অবহেলায় বাড়িটি পড়ে থাকে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্ত মানব হিসেবে স্বদেশে ফিরে আসলে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে তিনি এই বাড়িতে সপরিবারে পুনরায় বসবাস শুরু করেন। তারপর থেকে পুনরায় এই বড়ির আঙ্গিনা সরব হতে থাকে। সর্বসময়ে এই বাড়ির আঙ্গিনায় মানুষের ভিড়ছিল তাদের প্রিয় নেতাকে দেখার জন্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মধ্যদিয়ে বাড়িটি চির দিনের জন্য স্তব্ধ করতে চেয়েছিল কিছু বিপথগামী উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তা এবং স্বাধীনতা বিরোধী কতিপয় রাজনৈতিক। দীর্ঘ ছয় বছর বাড়িটি প্রথমে হত্যাকারী তারপর সামরিক কর্তৃপক্ষ দখল করে রাখে। বাড়িটিতে কাউকে ঢুকতে দেওয়াতো দূরের কথা পরিবারে কোনো সদস্যদেরকেও ঢুকতে দেওয়া হতো না। যার ফলে দীর্ঘদিন অযত্ন অবহেলার কারণে আগের মত শেয়াল না ডাকলেও বাড়িটির চারদিকে বনজঙ্গল, অন্ধকারাছন্ন, মাকড়সার জাল, ধুলাবালি, গাছপালা লতাপাতা ও পোকামাকড়ে বাসা বেধে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিলো।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশে ফিরে আসলে এই বাড়িতে ঢুকতে চাইলে তাদের ঢুকতে দিতোনা ঐ সময়ের সামরিক সরকার তারা দুই বোন বাড়ির সম্মুখে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করতো এবং দোয়া দূরুত পড়তো। এই সালেরই ১০ জুন  সামরিক কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে বাড়িটি বুঝে পাওয়ার পর দুই বোন চিন্তা করলেন এই বাড়িতে তারা আর বসবাস করবেননা কারণ তাদের পিতা জনগণকে ভালোবেসে সরকারি বাসভবনে না থেকে এই বাড়িতে বসবাস করে তাকে সপরিবারে জীবন দিতে হয়েছে। তারেই প্রেক্ষিতে তারা দুই বোন ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট এই বাড়িটিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে জনগণের জন্য উম্মক্ত করে দেন। তারপর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শকদের পদচারণয় এই বাড়ির আঙ্গিনা আগের মত সরগম হয়।